Wishes

একাদশীর পারন মন্ত্র

একাদশী স্বাভাবিকভাবে একটি চাঁন্দ্র তিথির নাম। চাঁদের শুক্লও কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথি হিন্দু ধর্মমতানুসারে এই দিনটিকে পূন্যতিথি হিসেবে বিবেচনা করা হয় করা হয়। এই দিনে সকল হিন্দুধর্মানুসারী উপবাস পালন করে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তার লীলা বিলাসের প্রথম থেকেই একাদশী উপবাসের প্রথা প্রবর্তন করে এসেছিলেন।

একাদশীতে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয়। তাই সেই সময় বিভিন্ন নামে একাদশী পালন করা হয়। তবে আষাঢ়, ভাদ্র ও কার্তিক মাসের শুক্লা একাদশী বিশেষ শুভ বলে গণ্য করা হয়। একাদশীর কথা পদ্মপুরাণে উল্লেখ করা আছে। এই তিথিতে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। খাবারের ওপরও বিশেষ কিছু নিয়মাবলী মেনে চলতে হয়। পুরানে বলা হয়েছে যে, যে মানুষ একাদশীর দিন শস্য দানা গ্রহণ করে সে তার পিতা-মাতা ভাই ও গুরুদের হত্যাকারী হয় এবং সে যদি বৈকুন্ঠেলোকেও উন্নত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।

এই তিথিতে সাধারণত ফলমূল বিভিন্ন সবজি এবং দুধ খাওয়া হয়। তবে একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করা বাঞ্ছনীয়। এই দিনে ফল আহার করতে হয়। এই পৃথিবীতে যারা সাত্বিক আহারী নন এবং যারা নেশা জাতীয় কিছু গ্রহণ করেন তাদের এই দিনে এসব কিছু থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। এছাড়াও রবি শস্য জাতীয় জিনিস থেকে এই দিনে দূরে থাকাটাই বাঞ্ছনীয়।

একাদশী করলে যে কেবলমাত্র নিজেদের জীবনের সদগতি হবে তা নয়। এটি প্রয়াত পিতা-মাতা যদি নরকবাসী হয়, তাদের কন্যা,পুত্র যদি একাদশী করে তাহলে তাদের পিতা-মাতাকে নরক থেকে উদ্ধার করতে পারেন। এছাড়া একাদশীর দিনে অন্য ভোজন করলে যেমন নরকবাসী হবে এবং অন্যকে ভোজন করালেও নরকবাসী হতে হবে। কাজেই একাদশী পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য। এই ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয় এটার উদ্দেশ্য হলো নিরন্তর স্ত্রী ভগবানের নাম স্মরণ করা, কীর্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। এই দিন যতটুকু সম্ভব পরনিন্দা, পরচর্চা, মিথ্যা ভাষণ,ক্রোধ,সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করা।

একাদশীর পারণ মন্ত্র হলো:

একাদশ্যাং নিরোহারো ব্রতেনানেন
কেশব।।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।

এই মন্ত্রটি পাঠের মাধ্যমে একাদশীর পারণ সম্পন্ন করতে হয়। একাদশীর তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙ্গার পর পঞ্জিকাতে একাদশী পারনের সময় উল্লেখ করা থাকে। সেই সময়ের মধ্যে রবিশস্য ভগবানকে নিবেদন করা হয়। তারপর প্রসাদ গ্রহণ করে পালন করা হয়। এই ব্রততে পারন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। পারণ ঠিক সময়ের মধ্যে না করলে এই ব্রত বৃথা হয়ে যায়। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান করে তিল, তুলসী এবং আতপ চাল দিয়ে পারন করতে হয়। অবশ্যই পারন মন্ত্র উচ্চারণ করে বলতে হয়।

একাদশী করলে শরীর স্বাস্থ্য দুইটাই অনেক ভালো থাকে। মাসে দুইটি করে একাদশী ব্রত পাওয়া যায়। এই দুইদিন ফল এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য শরীর ভালো থাকে। এই দিনে খাবার থেকে মানুষের মনকে দূরে রাখতে হয় অর্থাৎ মানুষকে সংযমের মধ্যে যেতে হয়। যে যতটা সংযমী হয় তার সে দিনে বেশি পূণ্য লাভ হয়।

একাদশীর দিনে যে বিষয়গুলোতে দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয় সেটা হল: একাদশী ব্রতর আগের দিন ঠিক বারোটার আগেই অল্প ভোজন করে নিলে সর্বোত্তম ভালো এছাড়া আগের দিন নিরামিষ খাবার খাওয়া বাঞ্ছনীয়। ঘুমানোর আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করে এবং মুখের কোনায় লেগে থাকা সব খাবার পরিষ্কার করে নেয়া অতীব জরুরী। আর এই দিনে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হয় এবং সকালে স্নান করে নিতে হয়।

একাদশী হলো একটি পূর্ণ তিথি এই তিথিতে ভগবান কে বেশি করে ডাকতে হয় এবং ভগবানের পায়ে নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে ভগবান ভক্তের সব আশা পূর্ণ করেন। সময় এবং সামর্থ্য অনুযায়ী সবারই একাদশী ব্রত পালন করা দরকার। যারা এই ব্রত পালন করেন তারা খুব সহজে ভগবানের কাছে পৌঁছে যেতে পারেন, এবং তাদের মনস্কামনাও তাড়াতাড়ি পূর্ণ হয়।

Arafat Mia

Bangla Date Today is the best website for providing Bangla date information based on Bengali calendar. This website publishes all type of date information in Bengali, English and Arabic Calendar.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
%d bloggers like this: